ঢাকার রাস্তায় আইন মানছে না বেশিরভাগ বাইক চালক


গত ১ সেপ্টেম্বর করোনা (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীসহ সারা দেশে পূর্ণ গণপরিবহন চালু হয়। এরপরই সড়কের পুরনো বিশৃঙ্খল রূপ ফিরতে থাকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। সড়ক নিয়ন্ত্রণে গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে ১৪ হাজার ১১৬টি মামলা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। এর মধ্যে ৮ হাজার ৪৭৬টি মামলা অর্থাৎ প্রায় ৬১ শতাংশই মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গত সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকার বাসিন্দারা ফিরতে শুরু করায় সড়কে বেড়েছে যানবাহন। এগুলোর মধ্যে মোটরসাইকেল চালকরা কিছুটা বেপরোয়া হয়ে ওঠায় তাদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগও বেশি উঠছে।
মোটরসাইকেল চালকরা বলেন, আইনের কঠোর প্রয়োগে নির্দোষ চালকরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এভাবে মামলার মধ্য দিয়ে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালনা নিয়ন্ত্রণে আনা দুষ্কর, ট্রাফিক আইন মানতে জনসচেতনতা সৃষ্টি প্রয়োজন।
অন্যদিকে ঢাকায় রাইড শেয়ারিং চালু হওয়ার পর মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ায় সড়কে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে এমন ভাবনাও জানিয়েছেন কেউ কেউ।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নথিতে রাইড শেয়ারিং চালু হওয়ার পর ঢাকায় মোটরসাইকেল বৃদ্ধি পেয়েছে এমন দাবির সমর্থন পাওয়া গেল ।
বিআরটিএ থেকে প্রাপ্ত অথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোতে ২০১১ থেকে ’১৬ পর্যন্ত প্রতি বছর ৫ থেকে ৮ শতাংশ হারে বেড়েছে নিবন্ধিত বাইকের সংখ্যা। এরপর ২০১৬ সালে পাঠাও রাইড শেয়ারিং অ্যাপ এবং কিছুদিনের মধ্যে আরও কিছু রাইড শেয়ারিং কোম্পানি চালু হওয়ার পর থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোতে বছরে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ হারে।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ বলছে, সেপ্টেম্বর থেকে শহরে আবার লোকজন ফিরছে, রাস্তায় ভিড় বাড়ছে। এ সময় অনেকেই ট্রাফিক আইন ভাঙছেন। মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ডিএমপি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে তৎপর হয়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কোনো বিশেষ অভিযান চলছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এ যুগ্ম কমিশনার বলেন, অভিযান চলছে না। ট্রাফিক বিভাগের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবেই কর্মকর্তারা তৎপর হয়েছেন।
জনবহুল শহর ঢাকায় প্রতিদিন মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে গড়ে প্রায় ৫০০ মামলাকে সহনীয় হিসেবে অভিহিত করে হোন্ডা লাইফের বিপণন কর্মকর্তা আনাস আনসারী বলেন, ঢাকায় যেসব ট্রাফিক সিগন্যালে কড়াকড়ি কম সেগুলোতে প্রায়ই দেখি সিগন্যাল ভেঙে বাইক চলে যায়।
মোটরসাইকেল ব্লগ ‘বাইকবিডি’র প্রতিষ্ঠাতা শুভ্র সেন বলেন, বাসায় ফেরার পথে দেখলাম ফুটপাতে সারি সারি বাইক পার্ক করে রাখা। এখন সার্জেন্ট যদি তাদের মামলা দেয় তাহলে তা তো হয়রানি নয়, যৌক্তিক মামলা। পুলিশ নিজের ডিউটি পালন করবে এটাই স্বাভাবিক।
তবে, কেবল মামলা করার মাধ্যমেই এসমস্যার সমাধান হবেনা বলে মনে করছেন বিশেজ্ঞরা। তাদের মতে, মামলা দেয়ার পাশাপাশি বাইক চালকদের সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে। রাস্তায় রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন, লিপলেট বিতরনসহ গণমাধ্যমেও সব ধরণের যানবাহন পরিচালনার বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা দরকার। বাইকারদেরও নিজেদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রেখে বাইক চালানো উচিত।