তিতাস টাকা দাবি করায় লিকেজ সারায়নি মসজিদ কমিটি


তিতাসের গাফিলতির কারণেই গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে নারায়ণগঞ্জে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় মুসল্লিরা।
মসজিদ কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাইপ মেরামত করতে কমিটির পক্ষ থেকে আমরা তিতাস কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়েছি। কিন্তু তারা টাকা দাবি করলে এ বিষয়ে আর গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।’
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে তিতাস গ্যাস এন্ড ট্রান্সমিশন কোম্পানির এমডি মো. আল মামুন বলেছেন, মসজিদে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় তিতাসের কোনো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে কয়েকজন মুসল্লি জানান, মসজিদের নিচ দিয়ে গ্যাস লাইনের পাইপ বসানো ছিল। নামাজ পড়তে এলেই পাওয়া যেত গ্যাসের গন্ধ। এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির মাধ্যমে একাধিক বার জানানো হয়েছিল তিতাস কর্তৃপক্ষকে। তবে তারা এ বিষয়টি আমলে নেয়নি। তাদের গাফিলতিতেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে জানতে তিতাসের নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মুকবুল আহম্মদকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
শনিবার সকালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে মুসল্লিদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিতাসের এমডি আলী মো. আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, মসজিদে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় তিতাসের কোনো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, মুসল্লিদের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে দোষী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য যে, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টায় নারায়ণগঞ্জের তল্লায় অবস্থিত বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।
এতে ৪০ জনের বেশি মুসল্লি দগ্ধ হন। দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৭ জনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে এসি বিস্ফোরণের কথা বলা হলেও মসজিদেও বাইরে এসির কমপ্রেসর এখনো অক্ষত আছে।
তবে বিস্ফোরণে মসজিদের ছয়টি এসি পুড়ে গেছে। জানালার কাচ উড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
গ্যাস থেকেই এ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আরেফিন।
দুর্ঘটনার পর রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি জানান, মসজিদের সামনের গ্যাসের লাইনে লিকেজ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে এসি চালানোর সময় জানালা বন্ধ থাকায় ওই গ্যাস ভেতরে জমা হয়ে যায়। হঠাৎ কেউ বৈদ্যুতিক সুইচ অফ-অন করতে গেলে স্পার্ক থেকে এই বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে।
মসজিদের মেঝের নিচ দিয়ে গ্যাসের লাইন গেছে। পানি দেয়ার সময় বুদ বুদ করে গ্যাস বের হচ্ছিল। আমরা ধারণা করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা দ্রুত এখানে এসে আমাদের ধারণাকে নিশ্চিত করে। তারা জানান- গ্যাসের লাইন থেকেই এই বিস্ফোরণ হয়েছে।