দিল্লিকে এড়িয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য চায় মিজোরাম


ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য হলেও দিল্লিকে এড়িয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাধীনভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চায় মিজোরাম। এর জন্য তাদের ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো অনুমোদন লাগবে না বলে জানিয়েছেন প্রদেশটির বাণিজ্য ও শিল্পবিষয়ক মন্ত্রী ড. আর লালথ্যাংলিয়ানা।
রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বাংলাদেশে সফররত মিজোরাম প্রতিনিধিদলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এই আগ্রহের কথা জানান ড. লালথ্যাংলিয়ানা। তিনি রাজ্যটির স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, প্রযুক্তি ও উচ্চশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে রয়েছেন।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে টিপু মুনশি বলেন, মিজোরাম ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের ৩১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ বাড়াতে চায়।
‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, টয়লেট্রিজ, সেনেটারি, প্লাস্টিক, জুসসহ সব ধরনের পণ্যের ভালো চাহিদা রয়েছে মিজোরামে। আগামীতে এসব পণ্য তারা আরও বেশি পরিমাণে নিতে চায়। একইভাবে মিজোরাম ভালো পাথর উত্তোলন করে। তাদের বাঁশ, বেত, আদা, মরিচ, কাঠসহ বাংলাদেশে চাহিদাযোগ্য পণ্য রপ্তানি করতে চায়।’
টিপু মুনশি বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য ভালো দিক। কারণ আমরাও চাই ভারতের সঙ্গে বিশেষ করে সেভেন সিস্টার্সে আমাদের রপ্তানি বাড়াতে। এখন তারাও আগ্রহ দেখাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা আশা করছি আগামীতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে।’
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে মিজোরামের বাণিজ্য ও শিল্পবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘মিজোরাম অঙ্গরাজ্য হলেও তাদের সংবিধান ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী মিজোরাম ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর আওতায় কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন ছাড়াই তারা মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য করে আসছে। বাংলাদেশের সঙ্গে এই নিয়মে বাণিজ্য করার সুযোগ রয়েছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে নানা ধরনের শুল্ক-অশুল্ক বাধা থাকলেও মিজোরামে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এই ধরনের শুল্ক জটিলতা থাকবে না। কারণ এখানে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে কোনো অনুমোদন নিতে হচ্ছে না।
‘মিয়ানমারের সঙ্গে তারা এভাবে বাণিজ্য করে আসছে। বাংলাদেশের সঙ্গেও তাদের এমন কোনো সমস্যা হবে না।’
মিজোরামকে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নিরাপদ কেন্দ্র উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘মিজোরাম একটি শান্তিপূর্ণ প্রদেশ। এখানে ব্যবসা ও বিনিয়োগের চমৎকার সুযোগ রয়েছে।
‘বিশ্বব্যাপী যখন করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, করোনায় সারা ভারত যখন বেকায়দায়, তখন মিজোরাম সুনিয়ন্ত্রিত কৌশলে সফল হয়েছে। মিজোরামে মাত্র ১১ জন করোনায় মারা গেছেন। ব্যবসা সম্প্রসারণে বাংলাদেশের যেকোনো উদ্যোগ মিজোরাম সাদরে গ্রহণ করবে।’
একইভাবে বাণিজ্য সম্প্রসারণের স্বার্থে মিজোরামের সঙ্গে বাংলাদেশ অংশে অবকাঠামোর উন্নয়নেও রাজ্যটি আগ্রহী।
টিপু মুনশি আরও জানান, মিজোরাম বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বা আগ্রহ দেখাচ্ছে। পাশাপাশি বাণিজ্য বাড়াতে সীমান্তে বর্ডার হাটের সংখ্যা বাড়াতেও তারা আগ্রহ দেখিয়েছে। ইতিমধ্যে তারা সীমান্তের চারটি পয়েন্টে সীমান্ত হাট স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। রাজ্যটির এমন আগ্রহে খুব শিগগিরই বর্ডার হাট উদ্বোধন করা হবে।
আর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের যোগাযোগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বান্দরবানের সাজেক পয়েন্টে স্বল্প-দূরত্বের একটি সেতু করার প্রয়োজন হবে। এ বিষয়ে সরেজমিনে দেখভালের জন্য আগামী মাসের ৭ তারিখে মিজোরাম সীমান্তে সাজেক পয়েন্টে আমিসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল পরিদর্শনে যাব। এই সেতুটি হয়ে গেলে মিজোরামের সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যোগাযোগের দ্বার উন্মুক্ত হবে।
টিপু মুনশি আরও বলেন ‘মিজোরাম নৌপথেও যোগাযোগ বাড়াতে চায়। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর, সড়ক-নৌপথ তারা ব্যবহার করতে চায়। যা থেকে বাংলাদেশের রাজস্ব আয় হবে।’