আর্মেনিয়া আমাদের অঞ্চল না ছাড়া পর্যন্ত লড়াই চলবে: আজারবাইজান


আর্মেনিয়া দখলকৃত অঞ্চল না ছাড়লে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আজারবাইজান। চারদিন ধরে চলা এ সংঘাত থেকে সরে আসতে আন্তর্জাতিক মহলের দাবিও প্রত্যাখ্যান করেছে দুই পক্ষ।
বিবিসি জানায়, আর্মেনিয়ার দখলে থাকা নাগোরনো-কারাবাখ ঘিরে রবিবার ভোর থেকে পুরোদমে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে আজারবাইজান। এ লড়াইয়ে উভয়পক্ষের বিপুল সংখ্যক হতাহতের ঘটেছে।
এর মধ্যে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর আহ্বান সত্ত্বেও আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে দুই দেশ।
৩০ সেপ্টেম্বর, বুধবার আজারবাইজানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে আর্মেনিয়ায় অভিযানকে ‘বৈধ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আর্মেনিয়া আমাদের ভূমি না ছাড়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব আমরা।’
এদিকে রাশিয়া এই সংঘাতের মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান বলেন, ‘তীব্র লড়াই চলার সময় কোনো আলোচনা হতে পারে না।’
একইভাবে আজেরি প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বলেন, ‘যেখানে পাশিনিয়ান প্রকাশ্যে নাগোরনো-কারাবাখকে আর্মেনিয়ার অংশ বলে ঘোষণা দিয়েছেন সেখানে কোনো আলোচনা নয়।’
এ লড়াইয়ে আজারবাইজানকে তুরস্কের সমর্থন জানানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। লাটভিয়ায় সফররত ম্যাখোঁর দাবি, ‘তুরস্ক যুদ্ধবার্তা দিচ্ছে।’
তবে তুরস্ক জানিয়েছে, আর্মেনিয়ার দখলে থাকা আজারবাইজানের অঞ্চলটি পুনরোদ্ধারে তারা বাকু সরকারকে সহায়তা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত।
এদিকে চারদিন ধরে চলা এ লড়াইয়ে আজারবাইজানের ৭৯০ সেনা হত্যা, একটি যুদ্ধবিমান, ৭২টি ড্রোন, এবং ট্যাঙ্কসহ ১৩৭টি সাঁজোয়া যান ধ্বংসের দাবি করেছে আর্মেনিয়া।
অন্যদিকে আর্মেনিয়ার সাড়ে ৫ শতাধিক সেনাকে হত্যা এবং ১৫টি রাডার ব্যবস্থা, তিনটি বিস্ফোরক গুদাম ও ট্যাঙ্কসহ বেশকিছু সাঁজোয়া যান ধ্বংসের দাবি করেছে আজারবাইজান। এছাড়া দখলে থাকা সাতটি গ্রাম ও দুটি পাহাড়ি এলাকা পুনরুদ্ধারেরও দাবি করেছে দেশটি।
আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান উভয় দেশই সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর তারা দুটি স্বাধীন দেশে পরিণত হয়।
তবে নাগোরনো-কারবাখ অঞ্চল নিয়ে প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে বিরোধ বাধে। এ নিয়ে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৯৪ সালে অঞ্চলটি দখলে নিয়ে নেয় আর্মেনিয়া।
যদিও নাগোরনো-কারবাখ অঞ্চলটি এখনো আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি।
ওই যুদ্ধে কয়েক লাখ মানুষ মারা যায় এবং ১০ লাখের বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। এই উদ্বাস্তুদের চাপ তৈরি হয় আজারবাইজানের ওপর। ২০১৬ সালেও অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুইপক্ষ লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছিল। সেসময় অন্তত ২০০ জন নিহত হয়েছিল।
চলতি বছরের গত জুলাইয়ে সীমান্তে দুপক্ষের মধ্যে লড়াইয়ে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে আজারবাইজানের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাও রয়েছেন। এরপর থেকে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।