প্রতারক আদম ব্যাপারী নুর উদ্দিন-প্রতারনার শীর্ষে নোয়াখালী ও বসুরহাট


ছবির লোকটির নাম নুর উদ্দীন মাহমুদ ওরফে শাহাবুদ্দিন। কানাডা প্রবাসী বাঙ্গালী এবং দেশের নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও সিলেটের অনেকেই তাকে চিনেন।
বাংলাদেশের নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে জন্ম নেয়া এই লোকটি আলোচিত ও চিহ্নিত প্রতারক। কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটের আলোচিত আল ইত্তেহাদ মাল্টিপারপাস এর সুজন যেই রকম শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আমেরিকা চলে এসেছিলো, ২০০০ সালে এই নুর উদ্দিন মাহমুদ একই রকম প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে কানাডা চলে এসেছিলো।
চট্রগ্রামের আগ্রাবাদের চৌমুহনীতে নিজ অফিসের মাধ্যমে আদম ব্যাপারী ও জাহাজে চাকরি লোভ দেখিয়ে শত শত মানুষকে পথে বসিয়ে বিপুল অর্থ নিয়ে কানাডা চলে আসে এই নুর উদ্দীন।
চট্টগ্রামের, কোম্পানীগঞ্জের অসংখ্য মানুষ এমনকি আত্মীয় ও পরিবারের লোকজনও বাদ যাই নাই তার প্রতারনার হাত থেকে। কানাডা এসেও প্রতারক নুর উদ্দীন কোন চাকরি বাকরি কখনো করেনি। এখানেও প্রতারণা ব্যাবসা চালিয়ে গিয়েছে।
৪/৫ জন পার্টনার নিয়ে শেয়ারে রেস্টুরেন্ট দিয়ে পরে বিক্রি করে দিয়ে সব টাকা আত্মসাৎ করে আরেক শহরে আবার পার্টনারে রেস্টুরেন্ট খুলতো। এভাবে নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, সিলেটের শতাধিক কানাডা প্রবাসী বাংগালীর টাকা মেরে পথে বসিয়ে দিয়েছে এই নুর উদ্দিন।
প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত বিপুল টাকা স্ত্রী ও ছেলেদের মাধ্যমে বাংলাদেশ দেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে নিজকে দেউলিয়া ঘোষণা করে এই ধুরন্ধর নুর উদ্দিন।
তার প্রতারণা ব্যবসার অন্যতম সহযোগী তার মেয়ে জামাই বামনী কলেজের শিক্ষক আবদুল আওয়াল। সারাজীবন জামাত/ শিবিরের রাজনীতি করা আউয়াল এখন নিজকে ওলামা লীগ নেতা দাবী করে অবাদে শশুরের প্রতারণার পার্টনার হয়ে অপকর্ম করে যাচ্ছেন।
কঠোর সামাজিক আইনের দেশ কানাডাতে কেউ নিজকে দেউলিয়া ঘোষণা করলে আপনি তার বিরুদ্ধে মামলাও দিতে পারবেন না আর কিছু বলতেও পারবেন না। টাকার পরিমাণ যত বড়ই হোক।
যারা নুর উদ্দীনের কাছে টাকা চেয়েছে তাদেরকে উল্টো জেল ও পুলিশি হয়রানী করেছে এই প্রতারক। কেউ ভদ্র ভাযায় টাকা চাইলেও এই প্রতারক পুলিশে অভিযোগ করতো তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। নুর উদ্দীনের বেশ কয়েকটি বিচার “কোম্পানীগঞ্জ সমিতি, কানাডা” করেছিলো কিন্তু একটা রায়ও বাস্তবায়ন করেনি।
এই রকম এক বাদী মোঃ সিরাজ উল্ল্যাহর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ” নুর উদ্দীন মাহমুদ আমার আপন চাচা শশুর। ৯০ হাজার ডলার দিয়ে উনি উনার হোটেলের অর্ধেক শেয়ার আমার কাছে বিক্রি করেন। ৩ মাস পর উনি আমার অগোচরে হোটেল বিক্রি করে দেন।
নতুন মালিক এসে হোটেল বুঝে নিলে আমি উনাকে আমার টাকা ফেরৎ দিতে বলি। তখন উনি আমার ফুফাতো শালা রাজিব ও অন্যান্য আত্নীয় সহ অনেকের উপস্থিতিতে আমাকে ৪/৫ টা চেকের মাধ্যমে ১ লক্ষ ডলারের চেক দেন। চেক নিয়ে ব্যাংকে গেলে শুনি উনি নিজকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। এরপর আজকে দশ বছর উনার থেকে আমি ১ ডলার ও উদ্ধার করতে পারি নাই।
কয়েক হাজার বার ফোন দিলে হয়ত একবার ধরে এবং আগামী মাসে দিবে বলে আশ্বাস দেয়। এই আগামী মাসটা গত ১০ বছরেও আর আসে নাই। গত দশ বছর যাবত প্রতি মাসে ৯০০ ডলার করে ব্যাংকে সুদ দিয়ে যাচ্ছি আমি এই টাকার জন্য। আমর শশুর পক্ষের সব আত্নীয় এটা জানে এবং সবাই যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলো আমার টাকা উদ্ধার করে দেয়ার জন্য। কিন্তু কোন লাভ হয় নাই। কানাডা থেকেও যে লোক তার আপন বৃদ্ধ মা বাবাকে ১ টাকা দেয় নাই কোনদিন, কোন খবর নেয়ার প্রয়োজন মনে করে নাই সেখানে আমি ভাতিজি জামাইতো কিছুই না তার কাছে। তার মা বাবা তাকে প্রতারণার জন্য অভিশাপ দিয়ে কবরে চলে গেছে “।
নুর উদ্দীন মাহমুদ এর আপন ভাগিনা কানাডা প্রবাসী সাবেক ছাত্র লীগ নেতা মোঃ রাজীবের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন ” আমার মামা এবং আমার দুলাভাই এর সাথে দেনদেন আমার সামনেই হয়েছিলো আর আমি ঐ হোটেলে জব করতাম।
কানাডাতে আমার মামার সব প্রতারণা আমি জানি কিন্তু এটা পারিবারিক বিষয় তাই কিছু বলতে চাই না। শুধু এটাই বলবো উনার কারনে আমরা আত্মীয় স্বজন সবার কাছে লজ্জিত “।
কানাডার অটোয়া যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনে বলেন ” নুর উদ্দীন মাহমুদ এর নানা রকম প্রতারণায় আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিব্রত। এই রকম প্রতারকদের কারণে কানাডা সরকার প্রবাসীদের জন্য দিন দিন কঠিন আইন তৈরী করছে। শুধু তাই নয় এই প্রতারক নুর উদ্দীন মাহমুদ টাকার বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি নূর চৌধুরীকে আশ্রয় ও সহযোগিতা করেছে। ২০১৫ সালে কানাডার সব মিডিয়ায় এই সংবাদ প্রকাশিত হলে আমরা তার ও নুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেছিলাম।
আমাদের যত বড় শাস্তিই হোক আমরা কানাডার বঙ্গবন্ধুর সৈনিকেরা তাকে পেলে গণধোলাই দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে নুর উদ্দিন মাহমুদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান ” আমার ভাতিজি জামাই সিরাজ উল্লাহর পাওনা ১ লক্ষ ডলারের মধ্যে ২০ হাজার ডলার বাবত দেশে কিছু জমি বুঝিয়ে দিয়েছি। বাকী ৮০ হাজার ডলারও সহসা দিয়ে দিবো। শত শত লোকের সাথে প্রতারণার অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবী করেন তিনি। “
সর্বশেয খবরে জানা যায় প্রতারক নুর উদ্দীন নতুন করে প্রতারনার কেন্দ্র খুলেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে। সেখানে কিছু বাংগালী ও পাকিস্তানীকে নিয়ে তিনি একটি রেস্টুরেন্টে খুলে প্রতারনা ব্যবসার শুভ উদ্ভোদন করছেন বলে জানায় একাধিক কাতার প্রবাসী বাংগালী। বর্তমানে নুর উদ্দীন মাহমুদ বেশির ভাগ সময় কাতার, ওমানসহ আরব দেশগুলোতে অবস্থান করছেন।
-নাজনীন রহমান